রবিবার হ্যানয়ের বিমানবন্দরে অবতরণের পর প্রেসিডেন্সিয়াল বিমানের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাখোঁ দুই হাত দিয়ে স্বামীর মুখে ধাক্কা দিচ্ছেন। ভিয়েতনাম সফরের শুরুতে বিব্রতকর এই পরিস্থিতে পড়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ।ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা সত্যি হলেও সেটিকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত ও সাধারণ পারিবারিক রসিকতার অংশ।
স্ত্রীর সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটি হচ্ছিল, একটু হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়েই ঘটনা ঘটেছে। ব্রিজিত একটু বিরক্ত হয়েছিল, কিন্তু কেউ তাকে ধাক্কা দিয়েছে বা ঘুষি মেরেছে— এমন ব্যাখ্যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। প্রত্যেক দম্পতির মাঝেই এমন ছোটখাটো ঝগড়া হয়ে থাকে, এটি একেবারে স্বাভাবিক।এই দৃশ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সংবাদ সংস্থার ক্যামেরায় ধারণ করা হয়।
ওই সময় বিমানের দরজা খোলা ছিল এবং সবাই সেই দৃশ্য দেখতে পান। স্ত্রীর ওই প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত হয়ে যান ম্যাখোঁ। তবে তিনি কিছুটা হতভম্ব হলেও দ্রুত সামলে নিয়ে উন্মুক্ত দরজা দিয়ে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। তবে বিমানের বেশিরভাগ অংশে ব্রিজিতের শরীর ঢাকা থাকায় তার মুখভঙ্গি বা শরীরী ভাষা স্পষ্ট বোঝা যায়নি।
এ ঘটনার পরে বউয়ের হাতে মার খাওয়া নিয়ে নীরবতা ভেঙে সোমবার (২৬ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ম্যাখোঁ বলেন, ‘আমরা ঠাট্টা করছিলাম।’ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও আমি ঠাট্টা করছিলাম, একটু ঝগড়া-মজার মতো ছিল, আমি হঠাৎ করে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এখন এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী এক বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আর কেউ কেউ তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে!’
ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অনলাইনে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। এমন সময়েই এ ঘটনা ঘটল যখন ফ্রান্স অভিযোগ করছে, তারা বারবার ভুয়া তথ্য প্রচার ও প্রোপাগান্ডার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে— বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে।এই মাসেই ম্যাখোঁর তৃতীয় ভিডিও ভাইরাল হলো।এর আগে একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছিল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের সঙ্গে কিয়েভ সফরের সময় ম্যাখোঁ কোকেন নিয়েছিলেন। আরো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ম্যাখোঁর সঙ্গে করমর্দনের সময় তাকে একরকম এড়িয়ে চলছেন।
কিয়েভ সফরের সেই ভিডিও নিয়েও ম্যাখোঁ কথা বলেন। তিনি জানান, তখন তিনি আসলে একটা টিস্যু সরিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা নিয়ে বলা হয় তিনি কোকেন সরাচ্ছেন। আর এরদোয়ানের সঙ্গে করমর্দনের ভিডিওতেও ‘মিথ্যা ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এসব কিছুই সত্য নয়, সবাইকে এখন একটু শান্ত হওয়া দরকার।’ঘটনার পর ম্যাখোঁ ও ব্রিজিত বিমান থেকে নেমে ভিয়েতনামের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনায় অংশ নেন। তবে প্রেসিডেন্ট যখন স্ত্রীর হাত ধরার চেষ্টা করেন, ব্রিজিত তা গ্রহণ করেননি। ভিডিওটি দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথমদিকে প্রেসিডেন্টের দপ্তর ভিডিওটির সত্যতা অস্বীকার করে এটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআইয়ের কাজ বলে সন্দেহ করেছিল। পরে ভিডিওটি সত্য প্রমাণিত হলে প্রেসিডেন্ট নিজেই বক্তব্য দেন।হ্যানয় সফরের মধ্য দিয়ে ম্যাখোঁ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের সূচনা হলো, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিকল্প হিসেবে ফ্রান্সকে তুলে ধরতে চান। তিনি আরো যাবেন ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে।৪৭ বছর বয়সি ম্যাখোঁ ও তার ৭২ বছর বয়সি স্ত্রী ব্রিজিতের সম্পর্ক বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ফার্স্ট লেডি হিসেবে ব্রিজিত অত্যন্ত সক্রিয় এবং নিজের লিঙ্গ পরিচয় ঘিরে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত পদক্ষেপও নিয়েছেন।