ঢাকা , রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় চলাফেরার সময় যেসব ফাঁদ এড়িয়ে চলবেন

ঢাকা শহরের ভিড়, জ্যাম আর নানা রকম চরিত্রের মানুষের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন আমাদের চলতে হয়। কেউ কেউ প্রথমবার আসছেন এই শহরে, কেউবা প্রতিদিনই অফিস-আদালত কিংবা ব্যবসার কাজে ঘোরাফেরা করছেন। কিন্তু এই বিশাল শহরের ভেতরেই কিছু ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতে বসে আছে প্রতারক চক্র, যারা একটুখানি সহানুভূতির সুযোগ নিয়ে আপনার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। তাই একটু সচেতন না থাকলেই বড় বিপদের মুখে পড়তে পারেন আপনি কিংবা আপনার প্রিয়জন।

ধরুন, আপনি ফার্মগেট দিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ দেখতে পেলেন কয়েকজন লোক মিলে একজনকে পেটাচ্ছে। আহত মানুষটি ছটফট করে আপনার দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘ভাই, একটু বাঁচান!’ স্বাভাবিক মানবিকতাবোধ থেকে আপনি হয়তো ছুটে যাবেন তাকে বাঁচাতে। কিন্তু এই সময়েই ঘটে যেতে পারে বিপর্যয়—তাকে মারার ভান করা লোকগুলো আসলে একদল সংঘবদ্ধ প্রতারক। আপনি কাছে গেলেই তারাও আপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, মেরে সব কিছু ছিনিয়ে নিতে পারে।

শুধু এটুকু না—ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী কাঁদছে। বলছে, তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল একজনের, কিন্তু ফোন করার মতো টাকা নেই। আপনার মোবাইল থেকে একটা মিসকল দিতে বলবে। আপনি মায়ায় পড়ে যদি ফোনটা ব্যবহার করতে দেন, বুঝবেন না কখন আপনি ঢুকে পড়লেন আরেকটা ফাঁদে। তারা নম্বর সংগ্রহ করে পরে ফোন করে লোভনীয় প্রস্তাব দেয়, রাজি হলে কোনো এক অজানা জায়গায় নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে।

শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী—জ্যামে বসে আছেন, হঠাৎ এক লোক লিফলেট ধরিয়ে দিল, তাতে লেখা নানা সমস্যার অলৌকিক সমাধান, দুর্বলতা দূর করার ভেলকি কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলার কথা। এসবই প্রতারণার জাল। ‘রুম ডেট’ বা ‘বিশেষ ম্যাসেজ’ নামে নানা কৌশলে আপনাকে তারা দাওয়াত দেবে। ভদ্রভাবে না করে দিন, এড়িয়ে চলুন।

আরেকটি ভয়ঙ্কর কৌশল হল রাস্তায় সুন্দর মুখোশ পরে থাকা মানুষদের ফাঁদ। চোখে বোরকা, মুখে মিষ্টি হাসি, হয়তো বলবে, ‘ভাই, একটু কথা বলবেন?’ আপনি ভাবলেন একটু আন্তরিকতা দেখালে হয়তো বন্ধুত্ব জমবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই সামান্য আলাপই হতে পারে আপনার সর্বনাশের সূত্রপাত। তারা আপনাকে নিজেদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে, ছবি তোলে, ভিডিও তোলে, তারপর ব্ল্যাকমেইল করে।

গাবতলী, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, মাওয়া, দৌলতদিয়া—এসব জায়গায় অনেক সময় দেখা যায় কিছু লোক তাস, লুডু বা অন্য খেলায় মেতে আছে। আপনি ভাবলেন সময় কাটানো যাবে, একটু মজা করা যাক। ভুল করবেন না। এগুলোও প্রতারণার চূড়ান্ত ফাঁদ। একবার খেলায় জড়ালেই টাকা হারানো তো হবেই, কখন যে মান-ইজ্জতও চলে যায়, আপনি টেরও পাবেন না।

ভ্রমণের সময় অপরিচিত কাউকে নিজের গন্তব্য জানানো, নিজের পরিচয় দেওয়া, এমনকি অকারণে গল্প করা থেকেও বিরত থাকুন। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সেটা যেন পরিচিত জায়গা হয়। আর একেবারেই অপরিচিত স্থানে একা না যাওয়াই ভালো।

রেলগাড়ির ছাদে চলা একসময় অনেকের কাছে রোমাঞ্চকর মনে হলেও এখন তা বিপজ্জনক। ছাদের ওপর এক দল ছিনতাইকারী থাকে, যারা চলন্ত ট্রেন থেকেই জিনিসপত্র কেড়ে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। আবার, লঞ্চে যদি যাত্রী কম থাকে, তাহলে না উঠাই ভালো।

স্পিডবোটে যাতায়াত করার সময় খুব সাবধান থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, মাঝপথে নির্জন কোনো জায়গায় বোট থামিয়ে ছিনতাই করে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। তাই খুব প্রয়োজন না হলে বেশি মূল্যবান কিছু সাথে না রাখাই ভালো।

রাস্তা পার হওয়ার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। বাসের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও ওঁত পেতে থাকে ছিনতাইকারী, অনেক সময় তারা নেশাগ্রস্ত থাকে, সামান্য জিনিসের জন্যও আঘাত করতে দ্বিধা করে না।

এই শহরে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ নিরাপদে চলাচল করছে, কাজ করছে। কিন্তু কিছু অসাধু প্রতারক সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা সচেতন হলেই পারি এমন ফাঁদে না পড়তে। নিজের সুরক্ষার কথা ভাবুন, অপরিচিত কারও কথায় সহজে বিশ্বাস করবেন না, চোখ-কান খোলা রাখুন। নিজের অভিজ্ঞতা ও এই সতর্কতাগুলো অন্যদের সঙ্গেও শেয়ার করুন, যাতে সবাই মিলে গড়তে পারি নিরাপদ এক ঢাকা।

Tag :
জনপ্রিয়

ঢাকায় চলাফেরার সময় যেসব ফাঁদ এড়িয়ে চলবেন

আপডেট সময়: ০১:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ঢাকা শহরের ভিড়, জ্যাম আর নানা রকম চরিত্রের মানুষের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন আমাদের চলতে হয়। কেউ কেউ প্রথমবার আসছেন এই শহরে, কেউবা প্রতিদিনই অফিস-আদালত কিংবা ব্যবসার কাজে ঘোরাফেরা করছেন। কিন্তু এই বিশাল শহরের ভেতরেই কিছু ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতে বসে আছে প্রতারক চক্র, যারা একটুখানি সহানুভূতির সুযোগ নিয়ে আপনার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। তাই একটু সচেতন না থাকলেই বড় বিপদের মুখে পড়তে পারেন আপনি কিংবা আপনার প্রিয়জন।

ধরুন, আপনি ফার্মগেট দিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ দেখতে পেলেন কয়েকজন লোক মিলে একজনকে পেটাচ্ছে। আহত মানুষটি ছটফট করে আপনার দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘ভাই, একটু বাঁচান!’ স্বাভাবিক মানবিকতাবোধ থেকে আপনি হয়তো ছুটে যাবেন তাকে বাঁচাতে। কিন্তু এই সময়েই ঘটে যেতে পারে বিপর্যয়—তাকে মারার ভান করা লোকগুলো আসলে একদল সংঘবদ্ধ প্রতারক। আপনি কাছে গেলেই তারাও আপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, মেরে সব কিছু ছিনিয়ে নিতে পারে।

শুধু এটুকু না—ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী কাঁদছে। বলছে, তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল একজনের, কিন্তু ফোন করার মতো টাকা নেই। আপনার মোবাইল থেকে একটা মিসকল দিতে বলবে। আপনি মায়ায় পড়ে যদি ফোনটা ব্যবহার করতে দেন, বুঝবেন না কখন আপনি ঢুকে পড়লেন আরেকটা ফাঁদে। তারা নম্বর সংগ্রহ করে পরে ফোন করে লোভনীয় প্রস্তাব দেয়, রাজি হলে কোনো এক অজানা জায়গায় নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে।

শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী—জ্যামে বসে আছেন, হঠাৎ এক লোক লিফলেট ধরিয়ে দিল, তাতে লেখা নানা সমস্যার অলৌকিক সমাধান, দুর্বলতা দূর করার ভেলকি কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলার কথা। এসবই প্রতারণার জাল। ‘রুম ডেট’ বা ‘বিশেষ ম্যাসেজ’ নামে নানা কৌশলে আপনাকে তারা দাওয়াত দেবে। ভদ্রভাবে না করে দিন, এড়িয়ে চলুন।

আরেকটি ভয়ঙ্কর কৌশল হল রাস্তায় সুন্দর মুখোশ পরে থাকা মানুষদের ফাঁদ। চোখে বোরকা, মুখে মিষ্টি হাসি, হয়তো বলবে, ‘ভাই, একটু কথা বলবেন?’ আপনি ভাবলেন একটু আন্তরিকতা দেখালে হয়তো বন্ধুত্ব জমবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই সামান্য আলাপই হতে পারে আপনার সর্বনাশের সূত্রপাত। তারা আপনাকে নিজেদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে, ছবি তোলে, ভিডিও তোলে, তারপর ব্ল্যাকমেইল করে।

গাবতলী, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, মাওয়া, দৌলতদিয়া—এসব জায়গায় অনেক সময় দেখা যায় কিছু লোক তাস, লুডু বা অন্য খেলায় মেতে আছে। আপনি ভাবলেন সময় কাটানো যাবে, একটু মজা করা যাক। ভুল করবেন না। এগুলোও প্রতারণার চূড়ান্ত ফাঁদ। একবার খেলায় জড়ালেই টাকা হারানো তো হবেই, কখন যে মান-ইজ্জতও চলে যায়, আপনি টেরও পাবেন না।

ভ্রমণের সময় অপরিচিত কাউকে নিজের গন্তব্য জানানো, নিজের পরিচয় দেওয়া, এমনকি অকারণে গল্প করা থেকেও বিরত থাকুন। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সেটা যেন পরিচিত জায়গা হয়। আর একেবারেই অপরিচিত স্থানে একা না যাওয়াই ভালো।

রেলগাড়ির ছাদে চলা একসময় অনেকের কাছে রোমাঞ্চকর মনে হলেও এখন তা বিপজ্জনক। ছাদের ওপর এক দল ছিনতাইকারী থাকে, যারা চলন্ত ট্রেন থেকেই জিনিসপত্র কেড়ে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। আবার, লঞ্চে যদি যাত্রী কম থাকে, তাহলে না উঠাই ভালো।

স্পিডবোটে যাতায়াত করার সময় খুব সাবধান থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, মাঝপথে নির্জন কোনো জায়গায় বোট থামিয়ে ছিনতাই করে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। তাই খুব প্রয়োজন না হলে বেশি মূল্যবান কিছু সাথে না রাখাই ভালো।

রাস্তা পার হওয়ার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। বাসের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও ওঁত পেতে থাকে ছিনতাইকারী, অনেক সময় তারা নেশাগ্রস্ত থাকে, সামান্য জিনিসের জন্যও আঘাত করতে দ্বিধা করে না।

এই শহরে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ নিরাপদে চলাচল করছে, কাজ করছে। কিন্তু কিছু অসাধু প্রতারক সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা সচেতন হলেই পারি এমন ফাঁদে না পড়তে। নিজের সুরক্ষার কথা ভাবুন, অপরিচিত কারও কথায় সহজে বিশ্বাস করবেন না, চোখ-কান খোলা রাখুন। নিজের অভিজ্ঞতা ও এই সতর্কতাগুলো অন্যদের সঙ্গেও শেয়ার করুন, যাতে সবাই মিলে গড়তে পারি নিরাপদ এক ঢাকা।