ঢাকা , রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মনির হোসেন লিটনের কলাম

অতিরাজনীতি সচেতনরা এখন দুই ভাগ

ট্রাম্প-মোদীর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ নিয়ে বাংলাদেশের ‘অতিরাজনীতি সচেতন’রা এখন দুই ভাগ। একই কথার একেবারে বিপরীতমুখী ব্যাখ্যা দিচ্ছে দুই পক্ষ। ব্যাখ্যার এই প্রতিযোগিতা দেখে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।

এরশাদ জমানার শেষ দিক, কবি শামসুর রাহমান তখন ‘মূলধারা’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। একদিন আমার এক কবিবন্ধু শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় আমাকেও নিয়ে গেলো। মূলধারা অফিসে সম্পাদকের কক্ষে শামসুর রাহমানের সঙ্গে আমরা টুকটাক আলাপ করছি, এমন সময় সেখানে প্রবেশ করলেন আরেক তরুণ কবি।

এই তরুণ কবি আবার শামসুর রাহমান-জীবনানন্দদের পাত্তা দিতে চাননা। তাদেরকে চিহ্নিত করেন অমুক দশকের কবি হিসাবে, বর্তমান সময়ে যারা অচল। আমাদের এই সাক্ষাতের সম্ভবত সপ্তাহ খানেক আগে দৈনিক ইত্তেফাকে শামসুর রাহমানের একটি কবিতা প্রকাশ হয়েছে। তরুণ কবি সেই কবিতার প্রসঙ্গ টেনে কবি শামসুর রাহমানকে বললেন, ‘আপনার পদ্যখানা (কবিতা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ) পড়লুম। প্রেমের রূপকে দেশের রাজনীতিকে ভালই ফুটিয়ে তুলেছেন।’ শামসুর রাহমান মৃদূ স্বরে বললেন, ‘আমি রাজনীতি নিয়ে লিখিনি। ওটা নিছকই প্রেমের কবিতা। এতে কোন রাজনীতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাও করিনি।’

 

তরুণ কবির আবারো কথা, ‘আপনি মুখে বলতে না চাইলেও পদ্যটিতে যে রাজনীতি নিয়ে এসেছেন সেটা কিন্তু সব পাঠকই বুঝবে।’ এরপর তাদের দুজনের মধ্যে মিনিট তিন-চারেক শুধু একই কথা। একজন বলছেন আপনার পদ্য রাজনীতি নিয়ে, আর কবি বলছেন সেটা নিছক প্রেম নিয়ে। এই ঘটনা মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে। আজ আবার বেশি করে মনে পড়লো। ট্রাম্পকে কি আবার জিজ্ঞেস করা যায় না সংবাদ সম্মেলনে সে কী বুঝিয়েছে তা যেন উদাহরণসহ ব্যাখা করে?

 

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক

Tag :
জনপ্রিয়

মনির হোসেন লিটনের কলাম

অতিরাজনীতি সচেতনরা এখন দুই ভাগ

আপডেট সময়: ০৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ট্রাম্প-মোদীর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ নিয়ে বাংলাদেশের ‘অতিরাজনীতি সচেতন’রা এখন দুই ভাগ। একই কথার একেবারে বিপরীতমুখী ব্যাখ্যা দিচ্ছে দুই পক্ষ। ব্যাখ্যার এই প্রতিযোগিতা দেখে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।

এরশাদ জমানার শেষ দিক, কবি শামসুর রাহমান তখন ‘মূলধারা’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। একদিন আমার এক কবিবন্ধু শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় আমাকেও নিয়ে গেলো। মূলধারা অফিসে সম্পাদকের কক্ষে শামসুর রাহমানের সঙ্গে আমরা টুকটাক আলাপ করছি, এমন সময় সেখানে প্রবেশ করলেন আরেক তরুণ কবি।

এই তরুণ কবি আবার শামসুর রাহমান-জীবনানন্দদের পাত্তা দিতে চাননা। তাদেরকে চিহ্নিত করেন অমুক দশকের কবি হিসাবে, বর্তমান সময়ে যারা অচল। আমাদের এই সাক্ষাতের সম্ভবত সপ্তাহ খানেক আগে দৈনিক ইত্তেফাকে শামসুর রাহমানের একটি কবিতা প্রকাশ হয়েছে। তরুণ কবি সেই কবিতার প্রসঙ্গ টেনে কবি শামসুর রাহমানকে বললেন, ‘আপনার পদ্যখানা (কবিতা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ) পড়লুম। প্রেমের রূপকে দেশের রাজনীতিকে ভালই ফুটিয়ে তুলেছেন।’ শামসুর রাহমান মৃদূ স্বরে বললেন, ‘আমি রাজনীতি নিয়ে লিখিনি। ওটা নিছকই প্রেমের কবিতা। এতে কোন রাজনীতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাও করিনি।’

 

তরুণ কবির আবারো কথা, ‘আপনি মুখে বলতে না চাইলেও পদ্যটিতে যে রাজনীতি নিয়ে এসেছেন সেটা কিন্তু সব পাঠকই বুঝবে।’ এরপর তাদের দুজনের মধ্যে মিনিট তিন-চারেক শুধু একই কথা। একজন বলছেন আপনার পদ্য রাজনীতি নিয়ে, আর কবি বলছেন সেটা নিছক প্রেম নিয়ে। এই ঘটনা মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে। আজ আবার বেশি করে মনে পড়লো। ট্রাম্পকে কি আবার জিজ্ঞেস করা যায় না সংবাদ সম্মেলনে সে কী বুঝিয়েছে তা যেন উদাহরণসহ ব্যাখা করে?

 

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক