ঢাকা , রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক থেকে সমন্বয়ক

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এই আন্দোলনের পুরো টাইমলাইনকে আমি আমার রাজনৈতিক যোগাযোগের ব্যবহারিক বাস্তবতা হিসেবে দেখতে পারি। ২০১৮ সালে আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা শুরু করি, তখনই শুরু হয় প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলন। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ বলে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দোহাই দিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন একটু বড় হলে রাস্তায় ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামকে দিনদুপুরে হাতুড়িপেটা করতে দেখলাম। একই বছর পুরো বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দেয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। এসবের পরে এল ২০১৮ সালের নিশি ভোটের নির্বাচন। সবকিছু কেমন যেন এ দেশের মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত সমাজ মেনে নিয়েই চলছিল। যা কিছু হোক, তরুণ প্রজন্ম খুব একটা কথা বলতে আগ্রহী নয়। অদৃশ্য এক মাফিয়াতন্ত্রে রয়েসয়ে নিজেকে গুছিয়েই চলছিল সবাই। কিন্তু মাফিয়াদের দুঃশাসন আর অত্যাচারের ফলে জনমানসে নীরবে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, সে ক্ষোভের আগুন সামলানোর সাধ্য কারও নেই—এই ধ্রুব সত্য তারা কখনো টের পায়নি, বুঝতেও চেষ্টা করেনি, উল্টো দম্ভভরে হম্বিতম্বি করতেই দেখা গেছে। মানুষ একটা গণবিস্ফোরণের অপেক্ষাই করছিল।

যেকোনো ক্ষমতাকে প্রশ্নের ওপর রাখতে সাংবাদিকতার একটা গোল্ডেন রুল আছে। সেটা হলো, ‘টু কমফোর্ট দ্য অ্যাফ্লিক্টেড অ্যান্ড টু অ্যাফ্লিক্ট দ্য কমফোর্টেবল’ (নিপীড়িতদের স্বস্তির ব্যবস্থা করা এবং শান্তিতে থাকা ক্ষমতাধরদের উৎপীড়নে রাখা)। পাঁচ থেকে ছয় বছরের ছোট্ট সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে আমি মৌলিকভাবে এবং সাধ্যমতো এই চর্চাটা করতাম। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার অস্ত্রটা মাফিয়াতন্ত্রের কলকবজার দিকেই যাচ্ছিল। করোনা–পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সিট–বাণিজ্য সিন্ডিকেট উন্মোচন করে আমার একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুদিন পর পত্রিকা থেকে আমাকে বিনা নোটিশে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে আমি হয়ে যাই পরিচয়হীন সাংবাদিক। তবে সাংবাদিকতা হারালেও সংবাদ–সোর্স তো আমি হারাইনি। এই সময়ে সাংবাদিক থেকে আমি রাজনীতির মানুষ হয়ে যাই। নানান মত ও পথের লোকের সঙ্গে তৈরি হতে থাকে যোগাযোগ। গত কয়েক বছরে ক্যাম্পাসে যেকোনো আন্দোলনমুখী ন্যারেটিভ কাজে লাগানোর মতো একটা যোগাযোগ আমাদের তৈরি হয়ে যায়।

Tag :
জনপ্রিয়

সাংবাদিক থেকে সমন্বয়ক

আপডেট সময়: ০১:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এই আন্দোলনের পুরো টাইমলাইনকে আমি আমার রাজনৈতিক যোগাযোগের ব্যবহারিক বাস্তবতা হিসেবে দেখতে পারি। ২০১৮ সালে আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা শুরু করি, তখনই শুরু হয় প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলন। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ বলে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দোহাই দিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন একটু বড় হলে রাস্তায় ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামকে দিনদুপুরে হাতুড়িপেটা করতে দেখলাম। একই বছর পুরো বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দেয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। এসবের পরে এল ২০১৮ সালের নিশি ভোটের নির্বাচন। সবকিছু কেমন যেন এ দেশের মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত সমাজ মেনে নিয়েই চলছিল। যা কিছু হোক, তরুণ প্রজন্ম খুব একটা কথা বলতে আগ্রহী নয়। অদৃশ্য এক মাফিয়াতন্ত্রে রয়েসয়ে নিজেকে গুছিয়েই চলছিল সবাই। কিন্তু মাফিয়াদের দুঃশাসন আর অত্যাচারের ফলে জনমানসে নীরবে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, সে ক্ষোভের আগুন সামলানোর সাধ্য কারও নেই—এই ধ্রুব সত্য তারা কখনো টের পায়নি, বুঝতেও চেষ্টা করেনি, উল্টো দম্ভভরে হম্বিতম্বি করতেই দেখা গেছে। মানুষ একটা গণবিস্ফোরণের অপেক্ষাই করছিল।

যেকোনো ক্ষমতাকে প্রশ্নের ওপর রাখতে সাংবাদিকতার একটা গোল্ডেন রুল আছে। সেটা হলো, ‘টু কমফোর্ট দ্য অ্যাফ্লিক্টেড অ্যান্ড টু অ্যাফ্লিক্ট দ্য কমফোর্টেবল’ (নিপীড়িতদের স্বস্তির ব্যবস্থা করা এবং শান্তিতে থাকা ক্ষমতাধরদের উৎপীড়নে রাখা)। পাঁচ থেকে ছয় বছরের ছোট্ট সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে আমি মৌলিকভাবে এবং সাধ্যমতো এই চর্চাটা করতাম। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার অস্ত্রটা মাফিয়াতন্ত্রের কলকবজার দিকেই যাচ্ছিল। করোনা–পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সিট–বাণিজ্য সিন্ডিকেট উন্মোচন করে আমার একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুদিন পর পত্রিকা থেকে আমাকে বিনা নোটিশে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে আমি হয়ে যাই পরিচয়হীন সাংবাদিক। তবে সাংবাদিকতা হারালেও সংবাদ–সোর্স তো আমি হারাইনি। এই সময়ে সাংবাদিক থেকে আমি রাজনীতির মানুষ হয়ে যাই। নানান মত ও পথের লোকের সঙ্গে তৈরি হতে থাকে যোগাযোগ। গত কয়েক বছরে ক্যাম্পাসে যেকোনো আন্দোলনমুখী ন্যারেটিভ কাজে লাগানোর মতো একটা যোগাযোগ আমাদের তৈরি হয়ে যায়।