মা দিবসের সূচনা কোনো একদিনে হয়নি। এটি সময়ের পরিক্রমায় নানা সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। প্রাচীন গ্রিস ও রোম সভ্যতায় মায়েদের এবং মাতৃ শক্তির পূজার রীতি ছিল। গ্রীকরা “রিয়া” নামের দেবীর পূজা করতেন, যিনি ছিলেন দেবতাদের মা। এ থেকেই মাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালনের ধারণার সূচনা হয়।
আধুনিক মা দিবসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী, আনা জার্ভিস। ১৯০৫ সালে নিজের মাকে হারানোর পর তিনি উপলব্ধি করেন—মাতৃত্বের সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন রয়েছে। ১৯০৮ সালে আনার উদ্যোগে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় প্রথম মা দিবস পালন করা হয়। সে বছর পেনসিলভানিয়াসহ আরও কয়েকটি জায়গায় দিবসটি পালিত হয়।
আনা জার্ভিস এরপর মা দিবসকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। দীর্ঘ ছয় বছর পর, ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘জাতীয় মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেন এবং এটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মা দিবসটি ক্রমে বাণিজ্যিক হয়ে ওঠে। উপহার, ফুল, কার্ড, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির কারণে দিনটির মূল আবেগ অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় বলে মনে করেন আনা জার্ভিস। এ কারণে তিনি নিজেই পরে দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধিতা শুরু করেন।
১৯৬২ সালে মা দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় এবং ধীরে ধীরে বিশ্বের প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি পালিত হতে শুরু করে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মা দিবসের তারিখ ভিন্ন, তবে সবচেয়ে বেশি দেশে এটি মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালন করা হয়। বাংলাদেশেও এই দিনটি একই তারিখে উদযাপিত হয়।
মা দিবস মূলত একটি আবেগঘন দিন, যা মায়েদের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।