কোন ভালমন্দ কিছু ভুলতে মানুষের সময় লাগে না। মানুষ খুব স্মৃতি বিস্মৃত প্রানী। সেখানে এক যুগ আগের ইতিহাস মুছে দিয়ে কেউ নিজের মতন মিথ্যে ইতিহাস রচনা করবে সেটাই স্বাভাবিক। এমনিতেই টেলিভিশন ইরেজ মিডিয়া। আজকাল কেউ এন্ডস্ক্রল লক্ষ্য করে না। সেই স্ক্রলে কার নাম ছিল বা কে প্রযোজনা করেছে তা দেখার ধৈর্য কই?
এ কারনে মাঝেমাঝে মনে হয়, মিডিয়ার অভিজ্ঞতাগুলো লিখি। সবাই জানুক পিছনের ঘটনা। লিপিবদ্ধ ইতিহাস সহজে কেউ মুছে দিতে পারবে না। পারবে না হাইজ্যাক করে ইতিহাস পাল্টে দিতে। আজকাল প্রায় শুনি বাংলাদেশের প্রথম স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসার্ট নাকি অমুকের তমুকের হাত ধরে শুরু হয়েছে। সে বা তারা নাকি স্টূডিও কনসার্টের স্বপ্নদ্রস্টা!

বাংলাদেশের প্রথম স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসার্ট নিয়ে ২০১৪ সালে একটা লেখা কোন এক পত্রিকায় লিখেছিলাম। পরে সেটা ফেসবুকে লিংকও দিয়েছিলাম। আজ আবার লিখছি। প্রকৃত সত্যটা সবাই জানুক।
একুশে টিভিতে শুরু হওয়া এই কনসার্টের মাধ্যমেই নতুন দিগন্তের সুচনা হয় । টেলিভিশনে নতুন সংযোজন স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসার্ট এখন সব চ্যানেলেই প্রচারিত হচ্ছে । প্রথম কনসার্ট শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের ঈদুল ফিতরের দিন সকাল সাড়ে নয়টায় । কমিশনিং এডিটর পারভেজ চৌধুরীর নির্বাহী প্রযোজনায় এবং আলমগীর হোসেনের প্রযোজনায় আলিফ আলাউদ্দীনের উপস্থাপনায় ব্যান্ড দল ” দলছুট” পারফর্ম করেছিল । এটাই ইতিহাস।

স্টুডিওতে এই প্রথম কনসার্ট হবে দুই কমিশনিং এডিটর রিপন খান ভাই, পারভেজভাই , ব্রডকাস্ট চীফ তৌফিক ভাই , ফ্যাসিলিটিজ চীফ আরিফভাই, সিনিয়র প্রোডিউসার আলমগীরভাই মিলে কত পরিকল্পনা , কত মিটিং । আইটি সাপোর্ট দেয়ার জন্য সংগ্রাম ভাই , আমিনুলভাই অনেক পরিশ্রম করেছিলেন । কনসার্টটির বিভিন্ন কাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন মেহমুদ খোকন । টাইটেল গ্রাফিক্স করেছিলেন মাহমুদুল হাসান খান ফারুকভাই । কনসার্ট সফল করার জন্য প্রোডাকশন টিম করা হয় । লাইন প্রোডিউসার ছিলাম আমি । আমার সাথে প্রোডাকশন টিমে আরো ছিলেন রফিকুল ইসলাম সরকার পাপ্পু ভাই, সঞ্জীব ভৌমিক দা, মানিক শিকদার, আবু সেলিম ভাই , মনিরুল ভাই । রির্সাচ ও প্রোডাকশান টিমে ছিলেন অনুপম কুমার পাল দা’। সাউন্ডে ছিলেন দুরেভাই , লাইটে ছিলেন খাইরুল হাসান হেলাল ভাই , অনলাইনে ছিলেন দীপক দা। ক্যামেরায় শফি ভাই ,শফিক ভাই ,ওমর ফারুক সুমনভাই ছিলেন ।

প্রমো প্রোডিউসার ছিলেন আদনান রহমান । ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কামরুল ও মিলন । স্টুডিও প্রোডাকশান সহকারী ছিল হেনরী, বেনড্রিক্ট, হানিফ ও হালিম। রূপসজ্জায় ছিলেন আলী ভাই, শিরীন আপা ও জীবন ভাই। আর্কাইভে ছিলেন স্বাতী।
এমসিআরে ছিলেন হানিফ ভাই, প্রসুন, কাজী সোহাগ।
প্রেজেন্টেশনে ছিলেন রাজ ভাই। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে খুবই সহযোগিতা করেছেন তৎকালীন সেলস এন্ড মার্কেটিং এডভাইজার মোজাম্মেল বাবুভাই ।

মনে পড়ে কনসার্টের আগের দিন বিকেলে মিটিংয়ে কত উত্তেজনা ! সেই উত্তেজনায় রাতে বাসায় যাওয়া হয়নি। অফিসে ৬ তলায় দেশজুড়ের ফ্লোরে পেপার বিছিয়ে পাপ্পুভাই আর আমি ঘুমিয়েছিলাম। ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে পাপ্পুভাই তিনটি হাইয়েজ নিয়ে ছুঁটে যান মগবাজার কনসার্টের সাউন্ডসিস্টেম তোলার জন্য। সেখান থেকে দলছুটের শিল্পীদের আনার জন্য। অফিসে বসে উপস্থাপকের গাড়ি ও অন্যান্য কলাকুশলীর গাড়ি ঠিকমতন গিয়েছে কিনা মনিটর করতে করতে মেহমুদ ও অন্যান্যরা চলে আসেন।
যাহোক সকাল ৮টায় দলছুট ব্যান্ডদল সঞ্জীব দা’ ও বাপ্পা দা’র নেতৃত্বে স্টুডিওতে ঢুকে সাউন্ড চেক করে ১০ তলায় ক্যান্টিনে নাস্তা সেরে নেন।
ঠিক সাড়ে ন’টায় শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসার্ট।

দুই কমিশনিং এডিটর রিপন খান ও পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে সফলভাবে আমরা কনসার্ট শেষ করেছিলাম । প্রথমদিনের পর আরো ৫ দিন একই সময় কনসার্ট করেছিলাম। একে একে পারফর্ম করে সোলস, রেঁনেসা, মাইলস ও এলআরবি।
কে জানত প্রথম স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসাটটি আমাদেরকেও ইতিহাসের সাক্ষী করে ফেলবে !
ইরেজ মিডিয়ায় কেউ হয়ত মনে রাখবে না , তাই স্মরন করিয়ে দিলাম আমরাই প্রথম । কেউ কেউ হয়ত হাইজ্যাক করবে এ অনুস্টানের প্রযোজক তিনি বা তাদের কেউ একজন ছিলেন! কিন্ত ইতিহাস বিকৃত করে কতদিন ধামাচাপা দেয়া যাবে প্রকৃত ইতিহাস?
লেখকঃ গণমাধ্যমকর্মী ও লেখক