দেশে চলমান অস্থিরতা ও রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে বিএনপি , জামায়াত ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে বর্তমান সংকট নিরসনে প্রত্যেক দলই তাদের অবস্থান থেকে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। সেই সাথে প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেছেন নিজেদের দাবি দাওয়া। শনিবার রাতে সর্বপ্রথম বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপি নেতারা জানান তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
বিতর্কিত উপদেষ্টাদের মধ্যে নিরাপত্তা উপদেষ্টা (খলিলুর রহমান) ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের নাম উল্লেখ করেছেন তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিও জানানো হয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে। মূলত সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন বিষয়ের ওপর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার এবং তাঁরা একমত হয়েছেন। সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে এবং সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। উত্থাপিত সকল দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বক্তব্য আসার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি এমনটিও জানান দলটির নেতারা। এদিকে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াত আমীর বলেন, দেশে অর্থবহ সংস্কার ও বিচার সম্পন্ন করে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং সমতল নির্বাচনী মাঠ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি আমরা। তবে জামায়াতে ইসলামী কারও কোনো পদত্যাগ চায়নি। প্রয়োজন অনুভব করলে সে বিষয়ে জানানো হবে। নির্বাচন নিয়ে কী আলাপ হয়েছে, এমন প্রশ্নে জামায়াতের আমির বলেন সবাই সংস্কারের পর নির্বাচন চায়। আমরাও চাই। তবে আমরা সময় বেঁধে দিইনি। সংস্কার শেষ হলে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্য কিংবা তা না হলে রোজার পরপরই হতে পারে। আমরা আমাদের মতামত জানিয়েছি। এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকের মাধ্যমে পুরো অস্থিরতা দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন জামায়াতের আমীর।
বিএনপি এবং জামায়াতের পর শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের গঠিত দল এনসিপি। পরে সাংবাদিকদের এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, বৈঠকের শুরুতেই এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। সেইসাথে তাকে অনুরোধ করেছে যেন তিনি গণভুত্থানের যে আদর্শ ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেন। নাহিদ জানান বৈঠকে তারা অন্তবর্তী সরকারের বেশ কিছু প্রত্যাশিত কাজে অগ্রগতি না হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলা, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশের আশ্বাস দিলেও তা এখনো না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে এনসিপি। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই মাসের মধ্যেই ঘোষণাপত্র প্রকাশ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানান নাহিদ ইসলাম। প্রধান উপদেষ্টা। প্রকাশিত হতে পারে।
এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপির আস্থার ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে কমিশন পুনর্গঠন সাপেক্ষে দ্রুত স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। এসময় আওয়ামীলীগ সরকারের আমলের সব নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করারও দাবি জানায় এনসিপি। সেইসাথে বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার এবং নির্বাচন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিও জানানো হয় এনসিপির পক্ষ থেকে। এসময় ছাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে জানান এনসিপির প্রতিনিধিরা। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় ২৫ মে রোববার সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদসহ আটটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট সাময়িক হলেও লাঘব হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।