ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাজ বাকি রেখেই উদ্বোধনে যাচ্ছে বিআরটি প্রকল্প

কিছু কাজ বাকি রেখেই আলোচিত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সরকার।

 

প্রকল্প শুরুর প্রায় এক যুগ পর গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাস চালু করা হলেও কিছু সমস্যা থেকে যাবে বলে মনে করছেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

 

শনিবার দুপুরে প্রকল্প পরিদর্শন শেষে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি বিআরটি স্টেশনে এক সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক উদ্বোধনের বিষয়টি জানান।

যানজট কমানোর কথা বলে বিআরটি এর কাজ হাতে নেওয়া হলেও দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রকল্পের কাজের কারণে এ পথের বিশেষত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় অন্তত ছয়জনের নিহত হওয়া ছাড়াও প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা নিয়েও গাজীপুরের মানুষ বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

এহছানুল হক বলেন, “বিআরটি প্রকল্পে অনেক টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বহুদিন ধরে মানুষ এর প্রতীক্ষায় আছে। এর একটা অবসান হওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে দুটি এসি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।”

 

“সড়কটি চালু হলেও বেশ কিছু সমস্যা থেকে যাবে। একদিনেই সেসব সমস্যার সমাধান হবে না। এ মুহূর্তে সড়কের প্রতিটি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, যা মানুষ পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আরো অতিরিক্ত ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত।”

এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, “আশা করছি, আগামী বছরের জুনে এই প্রকল্প পুরোপুরি ফাংশনাল করা সম্ভব হবে।”

 

২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেটিও হয়নি। সবশেষ বলা হয়েছিল, চলতি বছরের অগাস্টে কাজ শেষ হবে।

 

পরে সরকার আবার ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা জানায়। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিআরটি প্রকল্পে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। ফলে প্রকল্পের উদ্বোধন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।

বিআরটি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিআরটি বাস্তবায়িত হলে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।

যদিও তার সঙ্গে একমত না স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, বিআরটির বাস নির্বিঘ্নে চললেও নিচে যানজট ‘বাড়বে’ , জলাবদ্ধতা দেখা দেবে, পথচারীদের হাঁটার ফুটপাত সংকুচিত হওয়ায় তারা সড়কে চলতে বাধ্য হবে, এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়বে।

 

দুপুরে বিআরটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়ামিনও।

 

বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দুটি বাস পরিচালনা করছি। কিন্তু দুটি বাসে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। যার কারণে বাসগুলো এখন গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচল করবে।

 

“১৬ ডিসেম্বর আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর প্রাথমিকভাবে ১০টি বাস এই পথে চলাচল করবে। চাহিদা অনুযায়ী বাস বৃদ্ধি করা হবে।”

 

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়ামিন বলেন, “প্রকল্পটি কবে চালু হবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ছিল। স্বল্প পরিসরে হলেও আমরা ১৬ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করতে পারছি। শুরু হলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে, সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে সমাধান করার চেষ্টা করব।”

 

ভাড়ার বিষয়ে বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজীপুর নগরীর শিববাড়ি থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ টাকা, বোর্ডবাজার ৩৫, টঙ্গীর কলেজ গেট ৫০ ও এয়ারপোর্ট ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

ফিরতি পথে বিমানবন্দর থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত ২৫ টাকা, বোর্ডবাজার ৪০, চৌরাস্তা ৫৫ ও শিববাড়ি ৭০ টাকা করে দিতে হবে যাত্রীদের।

 

সভায় অন্যদের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব শামীম আরা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব বিনীতা রানী, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) মো. ইব্রাহিম খান, বিআরটি প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম, সওজ ঢাকা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আসলাম আলী, বিআরটিসির পরিচালক অনুপম সাহা, উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিম, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. মামুনুর রশীদ।

 

কাজ বাকি রেখেই উদ্বোধনে যাচ্ছে বিআরটি প্রকল্প

আপডেট সময়: ০৩:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

কিছু কাজ বাকি রেখেই আলোচিত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সরকার।

 

প্রকল্প শুরুর প্রায় এক যুগ পর গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাস চালু করা হলেও কিছু সমস্যা থেকে যাবে বলে মনে করছেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

 

শনিবার দুপুরে প্রকল্প পরিদর্শন শেষে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি বিআরটি স্টেশনে এক সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক উদ্বোধনের বিষয়টি জানান।

যানজট কমানোর কথা বলে বিআরটি এর কাজ হাতে নেওয়া হলেও দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রকল্পের কাজের কারণে এ পথের বিশেষত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় অন্তত ছয়জনের নিহত হওয়া ছাড়াও প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা নিয়েও গাজীপুরের মানুষ বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

এহছানুল হক বলেন, “বিআরটি প্রকল্পে অনেক টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বহুদিন ধরে মানুষ এর প্রতীক্ষায় আছে। এর একটা অবসান হওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে দুটি এসি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।”

 

“সড়কটি চালু হলেও বেশ কিছু সমস্যা থেকে যাবে। একদিনেই সেসব সমস্যার সমাধান হবে না। এ মুহূর্তে সড়কের প্রতিটি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, যা মানুষ পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আরো অতিরিক্ত ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত।”

এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, “আশা করছি, আগামী বছরের জুনে এই প্রকল্প পুরোপুরি ফাংশনাল করা সম্ভব হবে।”

 

২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেটিও হয়নি। সবশেষ বলা হয়েছিল, চলতি বছরের অগাস্টে কাজ শেষ হবে।

 

পরে সরকার আবার ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা জানায়। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিআরটি প্রকল্পে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। ফলে প্রকল্পের উদ্বোধন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।

বিআরটি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিআরটি বাস্তবায়িত হলে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।

যদিও তার সঙ্গে একমত না স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, বিআরটির বাস নির্বিঘ্নে চললেও নিচে যানজট ‘বাড়বে’ , জলাবদ্ধতা দেখা দেবে, পথচারীদের হাঁটার ফুটপাত সংকুচিত হওয়ায় তারা সড়কে চলতে বাধ্য হবে, এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়বে।

 

দুপুরে বিআরটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়ামিনও।

 

বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দুটি বাস পরিচালনা করছি। কিন্তু দুটি বাসে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। যার কারণে বাসগুলো এখন গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচল করবে।

 

“১৬ ডিসেম্বর আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর প্রাথমিকভাবে ১০টি বাস এই পথে চলাচল করবে। চাহিদা অনুযায়ী বাস বৃদ্ধি করা হবে।”

 

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়ামিন বলেন, “প্রকল্পটি কবে চালু হবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ছিল। স্বল্প পরিসরে হলেও আমরা ১৬ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করতে পারছি। শুরু হলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে, সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে সমাধান করার চেষ্টা করব।”

 

ভাড়ার বিষয়ে বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজীপুর নগরীর শিববাড়ি থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ টাকা, বোর্ডবাজার ৩৫, টঙ্গীর কলেজ গেট ৫০ ও এয়ারপোর্ট ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

ফিরতি পথে বিমানবন্দর থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত ২৫ টাকা, বোর্ডবাজার ৪০, চৌরাস্তা ৫৫ ও শিববাড়ি ৭০ টাকা করে দিতে হবে যাত্রীদের।

 

সভায় অন্যদের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব শামীম আরা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব বিনীতা রানী, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) মো. ইব্রাহিম খান, বিআরটি প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম, সওজ ঢাকা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আসলাম আলী, বিআরটিসির পরিচালক অনুপম সাহা, উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিম, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. মামুনুর রশীদ।