৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান এবং দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। অনেক নেতা জীবন রক্ষার্থে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এই অবস্থায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন। তিনি দেশে রয়েছেন না বিদেশে গেছেন—এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এ সময় তার বিষয়ে নানা গুঞ্জন এবং গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।
গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাস ৫ দিন ওবায়দুল কাদের দেশে ছিলেন এবং এ সময় তিনি নিরাপদে ছিলেন। তবে, শেখ হাসিনার মতো তিনিও ভারতে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দলের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি। সূত্রের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য দলের সভাপতির মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করেছিল। তার ‘ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ মন্তব্যটি আন্দোলনের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কারণ হয়ে ওঠে।
৮ই নভেম্বর, শিলং হয়ে কলকাতায় পৌঁছান ওবায়দুল কাদের। জানা যায়, তিনি সেখানে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন এবং দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কলকাতায় অবস্থান করতে চেয়েছিলেন তিনি, দিল্লিতে নয়, এবং তার জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে লবি করা হচ্ছিল। তবে শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাননি। এমনটাই জানিয়েছে দেশের জাতীয় দৈনিক মানবজমিন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরকার পতনের কয়েক দিন আগে হঠাৎ নীরব হয়ে যান। এমনটি বলা হয় যে, আন্দোলন নিয়ে তার দেয়া বক্তব্যের পর দলের সভাপতি তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলেন। এ সময় দলের অন্যান্য নেতারা গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন, তবে সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি। আওয়ামী লীগের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতা নানা মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন, কিন্তু ওবায়দুল কাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
টানা তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের নিজস্ব বলয় তৈরি করেছিলেন, যা দলের মধ্যে অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। এছাড়া, বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে তার তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য এবং নানা সময়ে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বিরক্তিকর চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক প্রচারণাও চলছিল।