“তোমার বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস…”
একজনকে শূন্য করে দিয়ে আরেকজন চলে গেলেন বিধাতার ডাকে। বলছিলাম বিবেক ও শ্রীজানার কথা।একসঙ্গে বাঁচা-মরার যে স্বপ্ন বিবেক এবং শ্রীজানা দেখেছিলেন, তা পূরণ হল না। শ্রীজানাকে একা ছেড়ে অজানার দেশে পাড়ি দিয়েছেন বিবেক। আর তাঁদের কথা মনে করে সমাজমাধ্যমেও মনখারাপের ঢেউ।
“কিছুক্ষণ আরও নাহয় রহিতে কাছে, আরও কিছু কথা নাহয় বলিতে মরে…”
বিবেক পাঙ্গেনি এবং শ্রীজানা সুবেদীর প্রেমকাহিনি এক গভীর, মর্মান্তিক, এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প। এই যুগে যখন অনেকেই প্রেমের টেকসই হতে না পারার কথা বলেন, তখন বিবেক এবং শ্রীজানার সম্পর্ক সে সব ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করেছে। একে অপরকে ভালোবাসার এবং সব বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর যে প্রতিজ্ঞা তাঁরা করেছিলেন, তা ছিল সত্যিকার অর্থে অটুট।
শ্রীজানার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি পোস্ট অনুযায়ী, প্রায় ১০ বছর আগে বিবেকের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দু’জনে একই স্কুলে পড়তেন। বিবেক ছিলেন উচু ক্লাসে।ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গভীর হয় বিবেক এবং শ্রীজানার। বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। ছ’বছর প্রেম করার পর বিয়ে করেন তাঁরা। এর পর দু’জনেই আমেরিকায় চলে যান। সেখানে নতুন জীবন শুরু করেন।জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন বিবেক। স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে বাঁচবে।
তাদের একসঙ্গে বাঁচা-মরার স্বপ্নটি শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। ২০২২ সালে যখন বিবেকের মস্তিষ্কে ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন শ্রীজানা তার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের মতো লড়াই শুরু করেছিলেন। স্বামীর শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হওয়ার পরও তিনি কখনোই তাকে একা যেতে দেননি। শ্রীজানা শুধু তার সঙ্গী ছিলেন না, একদিকে স্বামীকে ভালোবাসা, অন্যদিকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি, নিজের চুল কেটে দিয়ে বিবেকের সেবায় নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত ১৯ ডিসেম্বর, দীর্ঘ ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর, বিবেক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর অকাল চলে যাওয়া শ্রীজানাকে একাকী করে দিয়েছে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসার স্মৃতি এবং একে অপরের জন্য নির্ভরশীলতা বহু মানুষের মনকে স্পর্শ করেছে।
বিবেক এবং শ্রীজানার প্রেম শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তাদের সম্পর্ক সামাজিক মাধ্যমে বহু অনুগামীকে প্রভাবিত করেছে। তাদের জীবনের গল্প একদিকে যেমন শোকের ছায়া ফেলেছে, তেমনই মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই দম্পতি শুধু তাদের নিজস্ব জীবনে নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে গভীর ছাপ রেখে গেছেন।