ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘লাল সোনা’ পাচার করে পুষ্পার এতো রমরমা। কেন এতো দাম রক্তচন্দনের?

ভারতের তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু জেলা, বিশেষ করে নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা, এই দেশে বিখ্যাত রক্তচন্দন গাছের আদি বাসস্থান। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়া এই গাছের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, এবং এর উচ্চতা সাধারণত ৮-১২ মিটার হয়ে থাকে। রক্তচন্দন গাছকে স্থানীয়ভাবে ‘লাল সোনা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ এর কাঠ অত্যন্ত মূল্যবান এবং চাহিদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

 

২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ’ এবং তার দ্বিতীয় পর্ব ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ সিনেমায় রক্তচন্দন কাঠের পাচার এবং এর সঙ্গে যুক্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়েছে। সিনেমার প্রধান চরিত্র পুষ্পারাজ, যিনি রক্তচন্দন কাঠ চোরা পাচারের মাধ্যমে একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তবে বাস্তবে রক্তচন্দন কাঠের চাহিদা এবং পাচার একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চলচ্চিত্রের গল্পের সাথে বাস্তবের মিল তুলে ধরে।

 

এটি একটি ‘এনডেমিক স্পিসিস’, যার মানে এটি পৃথিবীতে অন্য কোথাও প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। ভারতে এই গাছটির খুব বেশি চাহিদা রয়েছে, বিশেষত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর ব্যবহারের জন্য। বদহজম, ডায়রিয়া, এবং রক্ত শুদ্ধিকরণের মতো সমস্যায় রক্তচন্দন কাঠ কার্যকর। এছাড়া পূজা-আর্চা, প্রসাধনী এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও এর ব্যবহার রয়েছে।

 

রক্তচন্দন কাঠের বিপুল চাহিদা এবং ঔষধি গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম অত্যন্ত বেশি। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণীতে তালিকাভুক্ত করেছে, কারণ এর অতিরিক্ত কাটা এবং পাচারের ফলে পৃথিবীজুড়ে অবশিষ্ট গাছের সংখ্যা মাত্র ৫% এর মতো রয়েছে।

 

বিশ্বব্যাপী রক্তচন্দন কাঠের চাহিদা বিশেষভাবে চীনে সবচেয়ে বেশি। চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চীনে। সেখানে এই কাঠ দিয়ে আসবাব, ঘরসজ্জা এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়। এর ফলে, চীনে পাচারের পরিমাণও অনেক বেশি।

 

ভারতে রক্তচন্দন কাঠ কাটা এবং পাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, তবে সত্ত্বেও চোরা পাচারকারীরা আইনকে ফাঁকি দিয়ে এই কাঠ পাচার করছে। এই পাচার রোধে ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হয়েছে, তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় পাচারকারীরা ধরা পড়ে না।

 

বর্তমানে, অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচন্দন গাছ পাওয়া গেলেও, বাজারের চাহিদা ও গাছটির অস্তিত্ব সংকটের কারণে অন্যান্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে।

এর সার্বিক পরিস্থিতি এবং চাহিদার কারণে, রক্তচন্দন কাঠ এখন ‘লাল সোনা’ হিসেবে পরিচিত, এবং এর পাচারের ঘটনা কোনোভাবে কমানো যাচ্ছে না।

‘লাল সোনা’ পাচার করে পুষ্পার এতো রমরমা। কেন এতো দাম রক্তচন্দনের?

আপডেট সময়: ০২:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু জেলা, বিশেষ করে নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা, এই দেশে বিখ্যাত রক্তচন্দন গাছের আদি বাসস্থান। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়া এই গাছের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, এবং এর উচ্চতা সাধারণত ৮-১২ মিটার হয়ে থাকে। রক্তচন্দন গাছকে স্থানীয়ভাবে ‘লাল সোনা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ এর কাঠ অত্যন্ত মূল্যবান এবং চাহিদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

 

২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ’ এবং তার দ্বিতীয় পর্ব ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ সিনেমায় রক্তচন্দন কাঠের পাচার এবং এর সঙ্গে যুক্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়েছে। সিনেমার প্রধান চরিত্র পুষ্পারাজ, যিনি রক্তচন্দন কাঠ চোরা পাচারের মাধ্যমে একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তবে বাস্তবে রক্তচন্দন কাঠের চাহিদা এবং পাচার একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চলচ্চিত্রের গল্পের সাথে বাস্তবের মিল তুলে ধরে।

 

এটি একটি ‘এনডেমিক স্পিসিস’, যার মানে এটি পৃথিবীতে অন্য কোথাও প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। ভারতে এই গাছটির খুব বেশি চাহিদা রয়েছে, বিশেষত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর ব্যবহারের জন্য। বদহজম, ডায়রিয়া, এবং রক্ত শুদ্ধিকরণের মতো সমস্যায় রক্তচন্দন কাঠ কার্যকর। এছাড়া পূজা-আর্চা, প্রসাধনী এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও এর ব্যবহার রয়েছে।

 

রক্তচন্দন কাঠের বিপুল চাহিদা এবং ঔষধি গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম অত্যন্ত বেশি। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণীতে তালিকাভুক্ত করেছে, কারণ এর অতিরিক্ত কাটা এবং পাচারের ফলে পৃথিবীজুড়ে অবশিষ্ট গাছের সংখ্যা মাত্র ৫% এর মতো রয়েছে।

 

বিশ্বব্যাপী রক্তচন্দন কাঠের চাহিদা বিশেষভাবে চীনে সবচেয়ে বেশি। চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চীনে। সেখানে এই কাঠ দিয়ে আসবাব, ঘরসজ্জা এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়। এর ফলে, চীনে পাচারের পরিমাণও অনেক বেশি।

 

ভারতে রক্তচন্দন কাঠ কাটা এবং পাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, তবে সত্ত্বেও চোরা পাচারকারীরা আইনকে ফাঁকি দিয়ে এই কাঠ পাচার করছে। এই পাচার রোধে ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হয়েছে, তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় পাচারকারীরা ধরা পড়ে না।

 

বর্তমানে, অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচন্দন গাছ পাওয়া গেলেও, বাজারের চাহিদা ও গাছটির অস্তিত্ব সংকটের কারণে অন্যান্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে।

এর সার্বিক পরিস্থিতি এবং চাহিদার কারণে, রক্তচন্দন কাঠ এখন ‘লাল সোনা’ হিসেবে পরিচিত, এবং এর পাচারের ঘটনা কোনোভাবে কমানো যাচ্ছে না।