রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে একটি বিতর্কিত বিষয়। তাঁর বক্তব্যে তিনি জামায়াতে ইসলামীর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য জানতে চান, বিশেষ করে তারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন এবং কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন কিনা।
এই মন্তব্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অনুষ্ঠিত ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় করা হয়। এখানে, ইকবাল হোসেন, যিনি যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী দলের সদস্য, তার পরিবারকে উপহারসামগ্রী প্রদান করা হয়।
রিজভীর প্রশ্ন মূলত জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকা এবং তাঁদের যুদ্ধের সেক্টরের বিষয়ে ছিল, যা বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, কারণ অনেকেই বিশ্বাস করেন যে জামায়াতে ইসলামীর কিছু সদস্য পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিল এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
রুহুল কবির রিজভী তাঁর বক্তব্যে প্রধানত দুটি বিষয় তুলে ধরেছেন: একদিকে তিনি সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রিজভী বলেন, সেনাবাহিনী দেশপ্রেমী এবং তাদের পূর্বপুরুষেরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। তিনি মেজর জিয়াউর রহমান এবং অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের ভূমিকা তুলে ধরেন, যাদের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এরপর তিনি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন, বিশেষত জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, তাদের একাত্তরে কী ভূমিকা ছিল? তিনি জানতে চান তারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন এবং কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে কাজ করেছেন। রিজভী এমন মন্তব্য করেন যে, কেউ যদি বাংলাদেশে দেশপ্রেমের একমাত্র দাবিদার হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে, তবে জনগণ তাদেরকে হাস্যকর হিসেবে দেখবে।
তারপর, রিজভী বিচারব্যবস্থার প্রসঙ্গে বলেন যে, সরকার কিছু হত্যাকাণ্ডের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা বললেও, তিনি দাবি করেন যে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে যারা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের বিচারও হওয়া উচিত। তিনি বিশেষভাবে ইলিয়াস আলী এবং চৌধুরী হারুনের বিচার দাবি করেন এবং বলেন, “গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।”
এভাবেই, রিজভী নিজের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ, সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থার অবিচার, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে তার দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেম নিয়ে কথা বললে তার হাস্যকর মনে হয়। তিনি ২৬ মার্চের দিন, যাদের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা ছিল, তারা পালিয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন। তার মতে, যেসব মুক্তিযোদ্ধা সব ভয় উপেক্ষা করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সংসার ও সন্তানদের কথা ভুলে, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের ভূমিকা ইতিহাসের স্বীকৃতি পাবে। তিনি মেজর জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে বলেন, যারা এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি সিলেটের এমসি কলেজ প্রাঙ্গণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে শহীদ জিয়ার সেক্টরের সদস্যরা যুদ্ধ করেছিলেন, এবং এটি দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সাক্ষী।
জাহিদ হোসেন বিএনপির অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন যে, বিএনপি একটি দল যা জনগণের পাশে থাকে। তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও বিএনপির অবদান তুলে ধরা হয়।
এছাড়া, আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা বিএনপির অন্যান্য নেতারা এবং বিভিন্ন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন, যারা নিজেদের বক্তব্যে দলীয় অবস্থান এবং দেশের জন্য ত্যাগের কথা উল্লেখ করেন।