সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক সেমিনারে তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাচার করা হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ কোটি টাকা।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, শুধু ব্যাংক খাত থেকে গত ১৫ বছরে ২ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনকুবেররা এ পাচারকাণ্ডে জড়িত। এছাড়া দেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র তৈরির জন্য গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২৮ লাখ কোটি টাকা।
জানা যায়, সিঙ্গাপুরে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে এস আলম পরিবার। সেখানে হোটেল ও পর্যটন খাতে এস আলম পরিবারের বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংক লুট করে সিঙ্গাপুরে বিপুল অর্থ পাচারের সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে টাস্কফোর্স।
জানা যায়, ইতোমধ্যে বিএফআইইউ-এর দেওয়া তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে দুদক। টাস্কফোর্সের অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে দুদক তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাচার করা সম্পদের তথ্য-উপাত্ত কাগজে-কলমে প্রমাণযোগ্য করার পরই মামলা করবে।
সন্দেহভাজন মোটা অঙ্কের অর্থ পাচারকারী হিসাবে টাস্কফোর্স সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ১০/১২টি শিল্প গ্রুপ ও একক ব্যক্তি হিসাবে সাবেক একজন মন্ত্রীকে চিহ্নিত করেছে। তালিকার আছে ব্যাংকখেকো হিসাবে আলোচিত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রের ছায়ায় থাকা এস আলম গ্রুপ, এস আলমের আশীর্বাদপুষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের পলাতক নেতা নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ, প্রয়াত কাজী সাহেদের জেমকন গ্রুপ, শিকদার গ্রুপ, বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় লোপাটকারী সামিট গ্রুপ এবং ওরিয়ন গ্রুপ। আরও কয়েকটি গ্রুপের নামও তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ের সবচেয়ে বড় অর্থ পাচারকারী সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামও রয়েছে তালিকায়। বিএফআইইউ ইতোমধ্যে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যাংক হিসাবের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দও করেছে সংস্থাটি। আর বেক্সিমকো ফার্মা ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব হাইকোর্টের নির্দেশে ফ্রিজ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের তথ্য ছাড়াও বিএফআইইউ শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর লেনদেনের যাবতীয় হিসাবও সংগ্রহ করেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯-এর ক্ষমতাবলে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন এক মাস বা ৩০ দিন করে সাত মাস বা ২১০ দিন ফ্রিজ করে রাখতে পারে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার ক্ষেত্রে এসব আইনের ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে বিএফআইইউ। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় লোপাটকারী এস আলমের পরিবারের সদস্যদের নামে ৩৫০টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে বিপুল টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে।