ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘লাল সন্ত্রাস’ এর ঘোষণা, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতির গ্রেপ্তার দাবি

লাল সন্ত্রাস ও সহিংসতার হুমকিতে শঙ্কিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু গতকাল ফেসবুক পোস্টে বিরোধী মত দমনে ‘রেড টেরর’ ও সহিংসতার হুমকি দেন।

 

পোস্টে তিনি লাল সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক সহিংসতার প্রবর্তনের কথা বলেছেন, যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ফেসবুক পোস্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যারা গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ করছে তারা সহিংসতার শিকার হতে পারে এবং যারা রাজনীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ চালানোর।

 

জুবায়ের বলেন, এই পোস্টের প্রতিবাদে এবং মেঘমল্লার বসুর গ্রেপ্তারের দাবিতে গত রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এমতাবস্থায় আমরা আশঙ্কা করছি ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে সংঘাত সৃষ্টি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করার একটি চক্রান্ত করা হচ্ছে, যা মেঘমল্লার বসুর পোস্টে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

 

তিনি আরো বলেন, যে-সকল শিক্ষার্থী গণতান্ত্রিক উপায়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে তারা শঙ্কা অনুভব করছে যে, তাদের দমন করতে অতীতের ন্যায় পুনরায় এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ আমরা ইতিহাসে দেখেছি এই লাল সন্ত্রাসীরা কীভাবে ভিন্নমতের মানুষকে বীভৎসভাবে খুন করেছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে অনতিবিলম্বে লাল সন্ত্রাসের উসকানিদাতা ও পর্দার আড়ালের কুশীলবদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সহিংসতার হুমকিদাতা মেঘমল্লার বসুকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক এবং আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

 

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা আশঙ্কা  করছি যে- এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের একটি সংঘাতের পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভুলণ্ঠিত করা। কারণ তারা জানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক প্লাটফর্ম ডাকসু নির্বাচন হলে তাদের পূর্বের ন্যায় অপতৎপরতা চালানোর সুযোগ কমে যাবে। সেজন্য তারা ডাকসু নির্বাচনকেও বানচাল করে দিতে চায়।

 

তাদের রেড টেররের পরিকল্পনা এবং প্রকাশ্যে দেওয়া ঘোষণা এই বার্তাই দেয়।

 

জুবায়ের বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে চলা সংঘাতময় পরিস্থিতির পেছনে এই লাল সন্ত্রাসীদের নীলনকশা ও ইন্ধন রয়েছে কি না খতিয়ে দেখুন। কারণ আমরা দেখেছি সন্ত্রাসীরা কীভাবে শ্রেষ্ঠা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করেছে। পুলিশকে ডিঙিয়ে এই সংঘাতের ইন্ধন দিয়েছে কিছু বাম নেতা। অনতিবিলম্বে এই সকল ইন্ধনদাতাসহ সকল হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে ক্যাম্পাস নিকটবর্তী এলাকায় পুলিশি হামলার সাথে জড়িতদেরও কঠোর বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

 

জুবায়ের আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এবং ক্যাম্পাসের সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে অনতিবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা সহ্য করা হবে না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ডাকসু নির্বাচন হলে ক্যাম্পাস থেকে সকল ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটবে- ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার ধারা ফিরে আসবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে জোবায়ের কমিউনিস্ট রাজনীতির অন্যতম আলোচিত নেতৃত্ব মাওবাদী নেতা সিরাজ সিকদারের গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী একটি মাওবাদী পার্টি। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পথ হিসেবে পার্লামেন্টারি পথ বর্জন করে গ্রাম ভিত্তিক দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের রাজনীতি গ্রহণ ও গোপন পার্টি গঠন করেন। বাংলাদেশের মধ্যে এই পথটা পরিত্যাজ্যা। গোপন ও সশস্ত্র বিদ্রোহ করে গুটি কয়েক মানুষের ক্যুমিন্দট বা মাওবাদি আইডিওলজি প্রতিষ্ঠা করলে সাধারণ জনগণের সাথে বেঈমানি হবে। লাইব্রেরির দেয়ালে সিরাজ শিকদারের গ্রাফিতি একই রকম চেতনার অবতারণা করতে পারে ও কালকে মেঘমল্লারের নানা সন্ত্রাসের ভ্যালিডিটি সিরাজ শিকদারকে কেন্দ্র করেই আবির্ভূত হতে পারে বিধায় প্রতিবাদী ছাত্রজনতা তার গ্রাফিতি মুছে দেয়।

 

সংবাদ সম্মেলন শেষে শাহবাগ থানায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লাল সন্ত্রাসের হুমকিদাতা মেঘমল্লার বসুর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার ঘোষণা দেন তিনি।

‘লাল সন্ত্রাস’ এর ঘোষণা, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতির গ্রেপ্তার দাবি

আপডেট সময়: ০৭:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

লাল সন্ত্রাস ও সহিংসতার হুমকিতে শঙ্কিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু গতকাল ফেসবুক পোস্টে বিরোধী মত দমনে ‘রেড টেরর’ ও সহিংসতার হুমকি দেন।

 

পোস্টে তিনি লাল সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক সহিংসতার প্রবর্তনের কথা বলেছেন, যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ফেসবুক পোস্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যারা গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ করছে তারা সহিংসতার শিকার হতে পারে এবং যারা রাজনীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ চালানোর।

 

জুবায়ের বলেন, এই পোস্টের প্রতিবাদে এবং মেঘমল্লার বসুর গ্রেপ্তারের দাবিতে গত রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এমতাবস্থায় আমরা আশঙ্কা করছি ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে সংঘাত সৃষ্টি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করার একটি চক্রান্ত করা হচ্ছে, যা মেঘমল্লার বসুর পোস্টে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

 

তিনি আরো বলেন, যে-সকল শিক্ষার্থী গণতান্ত্রিক উপায়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে তারা শঙ্কা অনুভব করছে যে, তাদের দমন করতে অতীতের ন্যায় পুনরায় এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ আমরা ইতিহাসে দেখেছি এই লাল সন্ত্রাসীরা কীভাবে ভিন্নমতের মানুষকে বীভৎসভাবে খুন করেছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে অনতিবিলম্বে লাল সন্ত্রাসের উসকানিদাতা ও পর্দার আড়ালের কুশীলবদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সহিংসতার হুমকিদাতা মেঘমল্লার বসুকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক এবং আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

 

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা আশঙ্কা  করছি যে- এই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের একটি সংঘাতের পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভুলণ্ঠিত করা। কারণ তারা জানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক প্লাটফর্ম ডাকসু নির্বাচন হলে তাদের পূর্বের ন্যায় অপতৎপরতা চালানোর সুযোগ কমে যাবে। সেজন্য তারা ডাকসু নির্বাচনকেও বানচাল করে দিতে চায়।

 

তাদের রেড টেররের পরিকল্পনা এবং প্রকাশ্যে দেওয়া ঘোষণা এই বার্তাই দেয়।

 

জুবায়ের বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে চলা সংঘাতময় পরিস্থিতির পেছনে এই লাল সন্ত্রাসীদের নীলনকশা ও ইন্ধন রয়েছে কি না খতিয়ে দেখুন। কারণ আমরা দেখেছি সন্ত্রাসীরা কীভাবে শ্রেষ্ঠা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করেছে। পুলিশকে ডিঙিয়ে এই সংঘাতের ইন্ধন দিয়েছে কিছু বাম নেতা। অনতিবিলম্বে এই সকল ইন্ধনদাতাসহ সকল হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে ক্যাম্পাস নিকটবর্তী এলাকায় পুলিশি হামলার সাথে জড়িতদেরও কঠোর বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

 

জুবায়ের আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এবং ক্যাম্পাসের সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে অনতিবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা সহ্য করা হবে না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ডাকসু নির্বাচন হলে ক্যাম্পাস থেকে সকল ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটবে- ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার ধারা ফিরে আসবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে জোবায়ের কমিউনিস্ট রাজনীতির অন্যতম আলোচিত নেতৃত্ব মাওবাদী নেতা সিরাজ সিকদারের গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী একটি মাওবাদী পার্টি। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পথ হিসেবে পার্লামেন্টারি পথ বর্জন করে গ্রাম ভিত্তিক দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের রাজনীতি গ্রহণ ও গোপন পার্টি গঠন করেন। বাংলাদেশের মধ্যে এই পথটা পরিত্যাজ্যা। গোপন ও সশস্ত্র বিদ্রোহ করে গুটি কয়েক মানুষের ক্যুমিন্দট বা মাওবাদি আইডিওলজি প্রতিষ্ঠা করলে সাধারণ জনগণের সাথে বেঈমানি হবে। লাইব্রেরির দেয়ালে সিরাজ শিকদারের গ্রাফিতি একই রকম চেতনার অবতারণা করতে পারে ও কালকে মেঘমল্লারের নানা সন্ত্রাসের ভ্যালিডিটি সিরাজ শিকদারকে কেন্দ্র করেই আবির্ভূত হতে পারে বিধায় প্রতিবাদী ছাত্রজনতা তার গ্রাফিতি মুছে দেয়।

 

সংবাদ সম্মেলন শেষে শাহবাগ থানায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লাল সন্ত্রাসের হুমকিদাতা মেঘমল্লার বসুর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার ঘোষণা দেন তিনি।