ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিস্যু পেপারে পাঁচ মিনিট ধরে চিঠি লিখলেন দীপু মনি

তখন সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিট (আজ সোমবার)। নীল রঙের বড় আকারের একটি প্রিজন ভ্যান হুইসেল বাজিয়ে ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানার সামনের ফটকে এসে দাঁড়ায়।

 

প্রিজন ভ্যান থেকে নামেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তাঁকে পুলিশের নারী সদস্যরা আদালতের হাজতখানার ভেতর নিয়ে যান।

 

সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ অন্যদের আগে থেকেই এই হাজতখানায় এনে রাখা হয়েছিল। দীপু মনিকে হাজতখানায় নেওয়ার ৩০ মিনিট পর সেখান থেকে প্রথমে হাজি সেলিমকে বের করে আনেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁর পরনে দেখা যায় ঢিলেঢালা সাদা রঙের পাঞ্জাবি।

 

গণমাধ্যমকর্মীদের দেখার পর হাজি সেলিম হাসতে থাকেন। এ সময় তাঁর দুই হাত ধরে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

 

হাজি সেলিমের ঠিক পেছনে ছিলেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ।

 

এরপর একে একে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ অন্যদের সিএমএম আদালতের চতুর্থ তলার এজলাসকক্ষে আনা হয়।

 

আদালতের এজলাসকক্ষে আগে থেকে আসামিদের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন বিচারক।

 

‘কারা কর্তৃপক্ষ হাজি সেলিমের কথা বুঝছে না’

 

বিমর্ষ হাজি সেলিমকে আসামির কাঠগড়ায় তোলার পর তিনি চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ।

 

আদালতে দেখা যায়, দীপু মনি জনৈক ব্যক্তির হাতে চিঠি হস্তান্তরের পর তিনি জুনাইদ আহ্‌মদের সঙ্গে কথা বলেন। সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও দীপু মনিকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায়।

 

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিঠি লেখার বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, এজলাসকক্ষের যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি শুনানি করছিলেন, সেখান থেকে কাঠগড়া কিছুটা দূরে। আদালতে অনেক আইনজীবী ছিলেন। জনাকীর্ণ আদালতে দীপু মনির চিঠি লেখার বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। যদি নজরে আসত, তাহলে অবশ্যই তিনি আদালতের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনতেন। কারণ, একজন আসামি আদালতের হেফাজতে থাকেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া এখানে তিনি চিঠি লিখতে, হস্তান্তর করতে পারেন না; কিংবা আইনজীবী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে কথা বলা যায় না।

 

দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর মক্কেল এ ধরনের কোনো চিঠি লিখেছেন কি না, তা তাঁর নজরে আসেনি। কারণ, জনার্কীর্ণ আদালতে তিনি সামনের দিকে অবস্থান করছিলেন। শুনানিতে ব্যস্ত ছিলেন।

 

দীপু মনিকে যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

 

চুপচাপ আনিসুল, সাবেক দুই আইজিপির কথোপকথন

 

আদালতে দেখা যায়, হাজতখানা থেকে আনিসুল হককে যখন এজলাসকক্ষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁর দুই হাত ছিল সামনে। বিমর্ষ মুখে এজলাসকক্ষে ঢুকে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন আসামির কাঠগড়ায়। তিনি কেবল তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আসামির কাঠগড়ায়। তাঁর পাশে সালমান এফ রহমান দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কোনো কথা বলেননি।

 

আনিসুল হকের খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও  চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। পাঁচ থেকে দশ মিনিট ধরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন।

 

আসামির কাঠগড়ার এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাশেদ খান মেনন। তাঁর বেশ দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসানুল হক ইনু। দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। তবে তাঁরা দুজনই তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন।

 

আজ শুনানি নিয়ে আদালত আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দুটি হত্যা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন হত্যা মামলায় জুনায়েদ আহ্‌মেদ, ফজলে করিম চৌধুরী ও শহীদুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিস্যু পেপারে পাঁচ মিনিট ধরে চিঠি লিখলেন দীপু মনি

আপডেট সময়: ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

তখন সময় সকাল ৯টা ৫ মিনিট (আজ সোমবার)। নীল রঙের বড় আকারের একটি প্রিজন ভ্যান হুইসেল বাজিয়ে ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানার সামনের ফটকে এসে দাঁড়ায়।

 

প্রিজন ভ্যান থেকে নামেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তাঁকে পুলিশের নারী সদস্যরা আদালতের হাজতখানার ভেতর নিয়ে যান।

 

সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ অন্যদের আগে থেকেই এই হাজতখানায় এনে রাখা হয়েছিল। দীপু মনিকে হাজতখানায় নেওয়ার ৩০ মিনিট পর সেখান থেকে প্রথমে হাজি সেলিমকে বের করে আনেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁর পরনে দেখা যায় ঢিলেঢালা সাদা রঙের পাঞ্জাবি।

 

গণমাধ্যমকর্মীদের দেখার পর হাজি সেলিম হাসতে থাকেন। এ সময় তাঁর দুই হাত ধরে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা।

 

হাজি সেলিমের ঠিক পেছনে ছিলেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ।

 

এরপর একে একে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ অন্যদের সিএমএম আদালতের চতুর্থ তলার এজলাসকক্ষে আনা হয়।

 

আদালতের এজলাসকক্ষে আগে থেকে আসামিদের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন বিচারক।

 

‘কারা কর্তৃপক্ষ হাজি সেলিমের কথা বুঝছে না’

 

বিমর্ষ হাজি সেলিমকে আসামির কাঠগড়ায় তোলার পর তিনি চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ।

 

আদালতে দেখা যায়, দীপু মনি জনৈক ব্যক্তির হাতে চিঠি হস্তান্তরের পর তিনি জুনাইদ আহ্‌মদের সঙ্গে কথা বলেন। সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও দীপু মনিকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায়।

 

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিঠি লেখার বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, এজলাসকক্ষের যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি শুনানি করছিলেন, সেখান থেকে কাঠগড়া কিছুটা দূরে। আদালতে অনেক আইনজীবী ছিলেন। জনাকীর্ণ আদালতে দীপু মনির চিঠি লেখার বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। যদি নজরে আসত, তাহলে অবশ্যই তিনি আদালতের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনতেন। কারণ, একজন আসামি আদালতের হেফাজতে থাকেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া এখানে তিনি চিঠি লিখতে, হস্তান্তর করতে পারেন না; কিংবা আইনজীবী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে কথা বলা যায় না।

 

দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর মক্কেল এ ধরনের কোনো চিঠি লিখেছেন কি না, তা তাঁর নজরে আসেনি। কারণ, জনার্কীর্ণ আদালতে তিনি সামনের দিকে অবস্থান করছিলেন। শুনানিতে ব্যস্ত ছিলেন।

 

দীপু মনিকে যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

 

চুপচাপ আনিসুল, সাবেক দুই আইজিপির কথোপকথন

 

আদালতে দেখা যায়, হাজতখানা থেকে আনিসুল হককে যখন এজলাসকক্ষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁর দুই হাত ছিল সামনে। বিমর্ষ মুখে এজলাসকক্ষে ঢুকে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন আসামির কাঠগড়ায়। তিনি কেবল তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আসামির কাঠগড়ায়। তাঁর পাশে সালমান এফ রহমান দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কোনো কথা বলেননি।

 

আনিসুল হকের খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও  চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। পাঁচ থেকে দশ মিনিট ধরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন।

 

আসামির কাঠগড়ার এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাশেদ খান মেনন। তাঁর বেশ দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসানুল হক ইনু। দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। তবে তাঁরা দুজনই তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন।

 

আজ শুনানি নিয়ে আদালত আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দুটি হত্যা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন হত্যা মামলায় জুনায়েদ আহ্‌মেদ, ফজলে করিম চৌধুরী ও শহীদুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।