ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুলশানে বিলাসবহুল ভবনের বাসিন্দার তালিকায় নাম ছিল টিউলিপ সিদ্দিকের

রাজধানী ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০ তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এ সম্পত্তির নাম করণ তার পরিবারের নামে করা বলে জানতে পেরেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট মেম্বার (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি দেশটির সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। আর তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টিউলিপ সিদ্দিকের এ সম্পত্তির ব্যাপারে ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটি ২০১৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের স্থায়ী ঠিকানা ছিল। যা ঢাকার গুলশানে অবস্থিত। ওই সময় টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

 

আদালতের নথি কিংবা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার গুলশানের এ সম্পত্তি নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে।

 

তবে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সূত্র বলছে, বাংলাদেশে কোনো সম্পত্তি নেই টিউলিপ সিদ্দিকের। এ জন্য কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন নেই। এদিকে প্রায় এক মাস আগেই দেশটির সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে এখনো নিজ নামের সম্পত্তিসংক্রান্ত ব্যাপারসহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন।

টিউলিপি সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর বিষয়টি নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদণ্ডবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস এসব তদন্ত করেন। এ উপদেষ্টা তদন্তে দেখতে পান, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি উপহার পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। আর উপহারের এই ফ্ল্যাট নিয়ে অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এ তদন্তের জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় তাকে।

 

টিউলিপ সিদ্দিক অল্প সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যের সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার দায়িত্বের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টি ছিল। শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। আর খালার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার নিয়ে কয়েক সপ্তাহের প্রশ্নের পর নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত করার জন্য লাউরির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

 

শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। গত জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে থাকেন। এ বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতা প্রতিক্রিয়ার পর আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন। আর এ ঘটনায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন। তার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন, হামলা, গ্রেপ্তার ও গোপন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

 

এদিকে একটি আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে দেখা গেছে, ঢাকার গুলশানের সম্পত্তিটি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ উভয় ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

 

এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর পদ থেকে সরে যান টিউলিপ সিদ্দিক। এর তিন সপ্তাহ পরের তারিখ রয়েছে কাগজপত্রে। তবে প্রতিবেদনের শুরুতে বলা, ওই সময় ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

 

গুলশানের ১০ তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণ করা হয় ২০১০ সালে। একটি প্রোমোশনাল ভিডিওর তথ্য অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটিতে একাধিক বারান্দা ও তিনটি শয়নকক্ষ রয়েছে।

 

বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে একটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। শহরটিতে দুই কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এ শহরবাসীর অধিকাংশ নাগরিক যেভাবে বসবাস করেন, তার একদম বিপরীত চিত্র গুলশানের এসব প্রশস্ত ফ্ল্যাট।

 

ঢাকার গুলশানের ওই ভবনটি টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, টিউলিপের নানা বা এই পরিবারের নামে কিনা, সেটি স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে জ্ঞাত এক ব্যক্তির ধারণা, ভবনটি পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমিতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে ভবনটির কোনো ফ্ল্যাটের মালিক এই পরিবারের কিনা বা বিশেষভাবে কার নামে নামকরণ করা হয়েছে এটি, এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।

 

এছাড়া টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেখনকার একটি অনলাইন জীবনীর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত সেখানকার বসবাসকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন তিনি।

 

আর টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা এ সম্পত্তিসহ আদালতের কাগজপত্র অনুযায়ী, ঢাকার গুলশানের অন্য একটি ঠিকানা ও ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে টিউলিপ সিদ্দিকের।

গুলশানে বিলাসবহুল ভবনের বাসিন্দার তালিকায় নাম ছিল টিউলিপ সিদ্দিকের

আপডেট সময়: ০৪:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাজধানী ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০ তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এ সম্পত্তির নাম করণ তার পরিবারের নামে করা বলে জানতে পেরেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট মেম্বার (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি দেশটির সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। আর তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টিউলিপ সিদ্দিকের এ সম্পত্তির ব্যাপারে ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটি ২০১৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের স্থায়ী ঠিকানা ছিল। যা ঢাকার গুলশানে অবস্থিত। ওই সময় টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

 

আদালতের নথি কিংবা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার গুলশানের এ সম্পত্তি নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে।

 

তবে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সূত্র বলছে, বাংলাদেশে কোনো সম্পত্তি নেই টিউলিপ সিদ্দিকের। এ জন্য কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন নেই। এদিকে প্রায় এক মাস আগেই দেশটির সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে এখনো নিজ নামের সম্পত্তিসংক্রান্ত ব্যাপারসহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন।

টিউলিপি সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর বিষয়টি নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদণ্ডবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস এসব তদন্ত করেন। এ উপদেষ্টা তদন্তে দেখতে পান, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি উপহার পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। আর উপহারের এই ফ্ল্যাট নিয়ে অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এ তদন্তের জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় তাকে।

 

টিউলিপ সিদ্দিক অল্প সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যের সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার দায়িত্বের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টি ছিল। শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। আর খালার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার নিয়ে কয়েক সপ্তাহের প্রশ্নের পর নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত করার জন্য লাউরির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

 

শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। গত জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে থাকেন। এ বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতা প্রতিক্রিয়ার পর আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন। আর এ ঘটনায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন। তার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন, হামলা, গ্রেপ্তার ও গোপন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

 

এদিকে একটি আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে দেখা গেছে, ঢাকার গুলশানের সম্পত্তিটি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ উভয় ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

 

এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর পদ থেকে সরে যান টিউলিপ সিদ্দিক। এর তিন সপ্তাহ পরের তারিখ রয়েছে কাগজপত্রে। তবে প্রতিবেদনের শুরুতে বলা, ওই সময় ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

 

গুলশানের ১০ তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক নির্মাণ করা হয় ২০১০ সালে। একটি প্রোমোশনাল ভিডিওর তথ্য অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটিতে একাধিক বারান্দা ও তিনটি শয়নকক্ষ রয়েছে।

 

বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে একটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। শহরটিতে দুই কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এ শহরবাসীর অধিকাংশ নাগরিক যেভাবে বসবাস করেন, তার একদম বিপরীত চিত্র গুলশানের এসব প্রশস্ত ফ্ল্যাট।

 

ঢাকার গুলশানের ওই ভবনটি টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, টিউলিপের নানা বা এই পরিবারের নামে কিনা, সেটি স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে জ্ঞাত এক ব্যক্তির ধারণা, ভবনটি পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমিতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে ভবনটির কোনো ফ্ল্যাটের মালিক এই পরিবারের কিনা বা বিশেষভাবে কার নামে নামকরণ করা হয়েছে এটি, এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।

 

এছাড়া টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেখনকার একটি অনলাইন জীবনীর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত সেখানকার বসবাসকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন তিনি।

 

আর টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা এ সম্পত্তিসহ আদালতের কাগজপত্র অনুযায়ী, ঢাকার গুলশানের অন্য একটি ঠিকানা ও ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে টিউলিপ সিদ্দিকের।