নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের চোখ দুটি অমূল্য এক সম্পদ। এই চোখ দিয়েই আমরা দেখি রঙিন পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ। তবে কখনও কখনও এই মূল্যবান চোখ হঠাৎ কেঁপে ওঠে বা লাফিয়ে ওঠে—যা অনেকেই কোনো অঘটনের ইঙ্গিত হিসেবে ভাবেন। কিন্তু এর পেছনে আছে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে চোখ কাঁপার নাম: মাইয়োকিমিয়া
চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যাটির নাম ‘মাইয়োকিমিয়া’ (Myokymia)। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে এক-দুবার চোখ কাঁপা স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু যখন এটি অতিরিক্ত হয়ে যায় বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেটি অবহেলা না করে গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন।
চোখ কাঁপার সম্ভাব্য ৬টি কারণ
চিকিৎসকদের মতে, কয়েকটি স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে চোখের পাতা কেঁপে উঠতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:
-
মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা
-
শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি
-
অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল সেবন
-
বাতাসে ধুলাবালু, ময়লা বা রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ
-
চোখে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
-
পুষ্টির ঘাটতি (বিশেষত ম্যাগনেশিয়াম)
চোখ কাঁপা সমস্যা হলে করণীয়
✅ ১. চোখের ওপর চাপ কমান
-
স্মার্টফোন, টেলিভিশন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে সময় কমান
-
কম আলোতে কাজ করা এড়িয়ে চলুন
-
মানসিক চাপ কমাতে সময় দিন বিশ্রামে
-
অতিরিক্ত চা ও কফি পান এড়িয়ে চলুন
-
প্রয়োজনে রোদচশমা ব্যবহার করুন
✅ ২. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
-
যদি সমস্যাটি বারবার দেখা দেয় বা চোখের জ্যোতিতে পরিবর্তন আসে, তবে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন
-
চোখের গুরুতর সমস্যা, অ্যালার্জি, অথবা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস হতে পারে চোখ কাঁপা
✅ ৩. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
-
প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন
-
নিশ্চিত করুন ৮ ঘণ্টার গভীর ঘুম
-
খাবারে ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন ‘বি’ যুক্ত খাবার যুক্ত করুন
-
খেতে পারেন: ডাবের পানি, দুধ, ডিম, বাদাম, মৌসুমি ফলমূল
✅ ৪. পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখুন
চিকিৎসকরা মনে করেন, শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি থাকলে চোখ কাঁপার সমস্যা হতে পারে। তাই সঠিক ডায়েট প্ল্যান মেনে চলা ও প্রয়োজনীয় পরিপূরক গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
চোখ কাঁপার সমস্যা অবহেলা করার মতো নয়। এটি হয়তো কোনো জটিল সমস্যার পূর্বাভাস দিচ্ছে। তাই প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া সমাধান ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে চেষ্টা করুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। তাতেও কাজ না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ, চোখের সুস্থতা মানেই সুন্দর দৃষ্টির নিশ্চয়তা।