বলিউডে বহু তারকার সৃজনশীল মতবিরোধের গল্প আছে, তবে অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান ও পরিচালক রাজ খোসলা–এর মধ্যকার একটি ঘটনাকে ঘিরে আজও চলে আলোচনা। বিষয়টি শুধু পোশাক বা চিত্রনাট্য না, বরং একজন শিল্পীর নিজস্ব অবস্থান এবং সম্মানের প্রশ্নে স্পষ্ট ও সাহসী অবস্থানের উদাহরণ হয়ে আছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৫৮ সালের ‘সোলবা সাল’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়। ওয়াহিদা এই সিনেমায় অভিনয় করছিলেন ‘লাজবন্তী’ নামের এক লাজুক ও রুচিশীল চরিত্রে। একটি দৃশ্যে দেখা যায়, তিনি জলে পড়ে যান এবং ভিজে যান। এই অংশের পরপরই পরিচালকের নির্দেশ ছিল, ওয়াহিদাকে স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাক পরে ক্যামেরার সামনে আসতে হবে—চিত্রনাট্যের দাবি বলে দাবি করেছিলেন নির্মাতা রাজ খোসলা।
কিন্তু ওয়াহিদা রেহমান দৃঢ়ভাবে না করে দেন। তার যুক্তি ছিল, চরিত্রের স্বভাব এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে এমন পোশাক মানায় না—এটি চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করবে।
এতে চটে যান রাজ খোসলা। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি শুটিং বন্ধ করে সবাইকে সেট ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেখানে উপস্থিত ছিলেন নায়ক দেব আনন্দ। প্রথমদিকে তিনি কিছু না বললেও, পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন।
রিচালক রাজ এতটাই বিরক্ত হয়েছিলেন যে ওয়াহিদাকে হুমকি দেন—আগামী দিনে যেন তিনি কাজ না পান, সে ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ওয়াহিদা পিছিয়ে যাননি।
দেব আনন্দ তখন হস্তক্ষেপ করেন। তিনি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন এবং ওয়াহিদার মতামতের পক্ষে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত নিজের পছন্দমতো পোশাকেই দৃশ্যের শুটিং সম্পন্ন করেন ওয়াহিদা।
‘সোলবা সাল’ সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শকপ্রিয়তা পায় এবং ব্যবসায়িকভাবেও সফল হয়। পরবর্তীতে দেব আনন্দ ও ওয়াহিদা রেহমান একাধিক সফল সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেন।
এক সাক্ষাৎকারে ওয়াহিদা বলেন, “আমার অভিনয়জীবনে দেব আনন্দের অবদান আমি কখনো ভুলব না। তিনি সবসময় শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
১৯৫৫ সালে ‘রোজুলু মারায়ি’ নামে একটি তেলেগু সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়ে পা রাখা ওয়াহিদা রেহমান আজও বলিউডের এক অনন্য নাম। তাঁর সর্বশেষ কাজ ছিল ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মারাঠি ছবি ‘স্কেটার গার্ল’।
শিল্পীসত্তার প্রতি সম্মান, চরিত্রের গভীরতা এবং নিজের নীতিতে অটল থাকার অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছেন ওয়াহিদা রেহমান।